ব্যবসায় পারিবারিক সম্পর্ক: আত্মীয়ের সঙ্গে চুক্তি করার আগে যা ভাববেন
আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন? চুক্তি করার আগে জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ কিছু আইনি ও মানসিক প্রস্তুতির বিষয়, যা ভবিষ্যতের ঝুঁকি কমাবে।
TEAM MITHILA
10/7/20251 min read


বাংলাদেশে পরিবার বা আত্মীয়দের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। আমরা অনেক সময় বিশ্বাসের জায়গা থেকে ভাবি - “ও তো আমার ভাই/আত্মীয়, আলাদা করে চুক্তি লাগবে না।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, ব্যবসা এবং পারিবারিক সম্পর্ক দুটি ভিন্ন বিষয়, এবং সঠিক আইনি কাঠামো না থাকলে সেই সম্পর্কের মধ্যে অস্বস্তি, ভুল বোঝাবুঝি এমনকি আইনি ঝামেলাও তৈরি হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব - আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি করার আগে কী বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি, এবং কীভাবে সম্পর্ক ও ব্যবসা দুটোই সুরক্ষিত রাখা যায়।
১. সম্পর্কের উপর নয়, নিয়মের উপর ভিত্তি গড়ে তুলুন
আত্মীয়তার উপর আস্থা রাখাটা স্বাভাবিক, কিন্তু ব্যবসায় নিয়মই শেষ কথা।
প্রথমেই স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করুন-
কে কত টাকা বিনিয়োগ করবেন
লাভের ভাগ কীভাবে হবে
ক্ষতি হলে দায়িত্ব কার ওপর পড়বে
সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কার থাকবে
এই বিষয়গুলো লিখিতভাবে না রাখলে ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝি অনিবার্য হয়ে পড়ে।
একটি লিখিত চুক্তি আপনার আস্থা কমায় না, বরং উভয়ের স্বচ্ছতা বাড়ায়।
২. লিখিত চুক্তি: “আমাদের মধ্যে দরকার নেই” কেনো এই ধারণা ভুল
অনেক সময় আমরা মনে করি, আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবসা মানেই মৌখিক বোঝাপড়া যথেষ্ট। কিন্তু ব্যবসায় এমন অনেক সময় আসে, যখন লাভ বা ক্ষতির হিসাব নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।
এই কারণে, আত্মীয় হোক বা বন্ধু - সবসময় লিখিত চুক্তি (Partnership Agreement বা Shareholders’ Agreement) করে রাখুন।
এই চুক্তিতে থাকা উচিত-
প্রত্যেকের বিনিয়োগের পরিমাণ
লাভ-ক্ষতির ভাগ
ব্যবসার সময়কাল
চুক্তি বাতিলের শর্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া
এতে ভবিষ্যতে ঝুঁকি বা সম্পর্কের টানাপোড়েন অনেকাংশে কমে যাবে।
৩. পরিবারের বাইরের পেশাদার পরামর্শ নিন
আত্মীয়দের সঙ্গে ব্যবসা করার সময় অনেকেই বাইরের আইনজীবী বা হিসাবরক্ষক পরামর্শ নেওয়া এড়িয়ে যান। কিন্তু বাস্তবে, একজন পেশাদার আইনজীবী বা ফিন্যান্স এক্সপার্ট নিরপেক্ষভাবে বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে পারেন - যা আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
যেমনঃ
ট্যাক্স ইমপ্লিকেশন
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া
শেয়ার বণ্টনের আইনি দিক
দায়বদ্ধতা (Liability) বিষয়ক শর্ত
একজন বাইরের বিশেষজ্ঞের মতামত অনেক সময় ভবিষ্যতের বিরোধ এড়াতে সাহায্য করে।
৪. ব্যবসায়িক সীমা নির্ধারণ করুন
পারিবারিক সম্পর্কের কারণে অনেক সময় ব্যবসার বাইরে বিষয় চলে আসে - “আজ অফিসে না গিয়ে একটু পারিবারিক কাজটা করে ফেলো”, “এই লাভটা পরে দেখা যাবে” - এই ধরনের অস্পষ্টতা ব্যবসায় ক্ষতি করে।
তাই শুরুতেই নির্ধারণ করুন-
অফিস ও পারিবারিক সময় আলাদা রাখবেন
ব্যবসার সিদ্ধান্ত পারিবারিক আবেগে নেবেন না
দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব সীমাবদ্ধ রাখবেন
এতে সম্পর্ক রক্ষা পাবে, ব্যবসাও পেশাদারভাবে চলবে।
৫. লাভের পাশাপাশি ক্ষতির প্রস্তুতিও নিন
ব্যবসা সবসময় লাভজনক নাও হতে পারে। তাই আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবসা করার আগে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন - ক্ষতি হলে কে কতটা দায় নেবেন?
এই বিষয়টি চুক্তিতেই উল্লেখ থাকা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, ক্ষতির সময় এক পক্ষ পুরো দায় বহন করতে হয়, আরেক পক্ষ সরে যায়। এটি শুধু আর্থিক নয়, মানসিক সম্পর্কেও ভাঙন আনে।
৬. ব্যবসা বন্ধ বা অংশীদার পরিবর্তনের শর্ত রাখুন
চুক্তির শুরুতেই উল্লেখ করুন-
কেউ যদি ব্যবসা ছাড়তে চায়, কীভাবে ছাড়বে
নতুন অংশীদার যুক্ত হলে কী নিয়মে হবে
মৃত্যু বা অক্ষমতার ক্ষেত্রে শেয়ার বা দায় কীভাবে ট্রান্সফার হবে
এই বিষয়গুলো অনেক সময় অস্বস্তিকর মনে হলেও এগুলোই ভবিষ্যতের বড় আইনি সমস্যাকে প্রতিরোধ করে।
৭. ট্যাক্স ও আইনি দায়বদ্ধতা স্পষ্ট রাখুন
আত্মীয়ের সঙ্গে ব্যবসা মানেই কম আনুষ্ঠানিকতা - এই মানসিকতা অনেক সময় সমস্যার কারণ হয়। আপনার ব্যবসা যদি রেজিস্টার্ড হয়, তবে সবার ট্যাক্স দায়, TIN, ব্যাংক হিসাব, এবং রেকর্ড পরিষ্কারভাবে পৃথক রাখুন। যদি কেউ ব্যক্তিগত খরচ ব্যবসার নামে দেখায়, বা ব্যবসার ফান্ডে গণ্ডগোল করে, তাহলে পুরো প্রতিষ্ঠান আইনি সমস্যায় পড়তে পারে।
৮. পারিবারিক সম্পর্ক রক্ষা করার উপায়
ব্যবসা ও সম্পর্ক একসাথে রাখতে চাইলে কিছু নীতিমালা মেনে চলুন-
ব্যক্তিগত বিষয় কখনো অফিসে টানবেন না
ব্যবসার মতবিরোধ পারিবারিক অনুষ্ঠানে আলোচনা করবেন না
লাভ বা ক্ষতির বিষয় নিয়ে অপ্রয়োজনীয় তর্ক করবেন না
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - ব্যবসায় ব্যর্থতা মানেই সম্পর্কের ব্যর্থতা নয়।
আত্মীয় বা পরিবারের সদস্যের সঙ্গে ব্যবসা করা অনেক সময় স্বপ্নের মতো মনে হয়। একে অপরের প্রতি আস্থা, পরিচিতি ও সহযোগিতা ব্যবসার শক্তি হতে পারে। কিন্তু আস্থা রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সঠিক চুক্তি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা।
মনে রাখবেন - আইনি কাঠামো মানে অবিশ্বাস নয়, বরং সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করার বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত।
আপনি কি আত্মীয় বা পরিবারের কারও সঙ্গে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন?
সঠিক চুক্তি ও আইনি পরামর্শের মাধ্যমে আপনার সম্পর্ক ও ব্যবসা দুটোই সুরক্ষিত রাখতে আজই যোগাযোগ করুন Advocate Masuma Akter Mithila-র সঙ্গে।