স্টার্টআপ ফান্ডিং-এর আগে যে আইনি বিষয়গুলো জানা জরুরি
ফান্ডিংয়ের আগে উদ্যোক্তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রস্তুতি নিতে হয়। এই ব্লগে জানুন, কীভাবে সঠিক আইনি কাঠামো গড়ে তুললে আপনার স্টার্টআপ নিরাপদ ও বিনিয়োগ-উপযোগী হয়।
TEAM MITHILA
10/7/20251 min read


অনেক উদ্যোক্তা মনে করেন “ফান্ডিং পাওয়া মানে সাফল্যের অর্ধেক পথ পেরোনো।” কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিনিয়োগ পাওয়ার আগে আপনার ব্যবসা কতটা আইনি প্রস্তুত, সেটিই আসল নির্ধারক। একজন ইনভেস্টর তার টাকা এমন জায়গায় দিতে চান যেখানে ঝুঁকি কম এবং কাঠামো পরিষ্কার। তাই ফান্ডিংয়ের আগে আইনি দিকগুলো পরিষ্কারভাবে সাজানোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
১. ব্যবসার কাঠামো নির্ধারণ করুন
স্টার্টআপের আইনি কাঠামো ঠিক করাই প্রথম ধাপ। আপনি কি সোল প্রোপ্রাইটরশিপ, পার্টনারশিপ, নাকি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে কাজ করছেন? প্রতিটি কাঠামোর ট্যাক্স, দায়বদ্ধতা এবং ইনভেস্টর সম্পর্কিত আলাদা নিয়ম থাকে। একজন বিনিয়োগকারী সাধারণত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানিকেই পছন্দ করেন, কারণ এখানে মালিকানা, শেয়ার বণ্টন, ও লাভের হিসাব স্পষ্ট থাকে।
২. শেয়ার স্ট্রাকচার ও মালিকানার স্পষ্টতা
ফান্ডিংয়ের সময় সবচেয়ে বেশি জটিলতা হয় মালিকানার ভাগ নিয়ে। শুরুতেই শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে একটি পরিষ্কার শেয়ারহোল্ডার এগ্রিমেন্ট (SHA) তৈরি করুন।
এতে উল্লেখ থাকবে-
কে কত শতাংশ মালিক
কে সিদ্ধান্ত নেবে
নতুন ইনভেস্টর এলে কীভাবে শেয়ার ডাইলিউশন হবে
এই স্বচ্ছতা ভবিষ্যতে অপ্রয়োজনীয় বিরোধ থেকে রক্ষা করবে এবং ইনভেস্টরদের আস্থা বাড়াবে।
৩. ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি (IP) সুরক্ষা
স্টার্টআপ মানেই নতুন আইডিয়া। কিন্তু আইডিয়া যতই ভালো হোক, যদি সেটার মালিকানা আইনগতভাবে সুরক্ষিত না থাকে, ইনভেস্টর ঝুঁকি নেবেন না।
আপনার ব্র্যান্ড নাম, লোগো, প্রোডাক্ট ডিজাইন বা সফটওয়্যার - সবকিছু যথাযথভাবে ট্রেডমার্ক, কপিরাইট বা পেটেন্ট করে রাখুন।
এটা শুধু সুরক্ষা নয়, ব্যবসার ভ্যালুয়েশনে বড় ভূমিকা রাখে।
৪. ফাউন্ডারদের মধ্যে চুক্তি (Founders’ Agreement)
স্টার্টআপের শুরুতে সবাই একসাথে স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সময়ের সাথে মতভেদ, দায়িত্ব বিভাজন বা প্রস্থান নিয়ে সমস্যা হয়। একটি Founders’ Agreement তৈরি করুন যেখানে থাকবে:
প্রতিটি ফাউন্ডারের ভূমিকা ও দায়িত্ব
সিদ্ধান্ত গ্রহণের পদ্ধতি
একজন চলে গেলে বা শেয়ার বিক্রি করলে কী হবে
এই চুক্তি ব্যবসাকে টিমভিত্তিক শক্তি দেয় এবং ইনভেস্টরদের কাছে পেশাদারিত্বের প্রতীক হয়ে ওঠে।
৫. কমপ্লায়েন্স ও রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ করুন
আপনার ব্যবসা আইনত বৈধ তা প্রমাণ করতেই বিভিন্ন রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স দরকার।
যেমনঃ
ট্রেড লাইসেন্স ও TIN নম্বর
VAT রেজিস্ট্রেশন
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (BIDA) বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন
এই ডকুমেন্টগুলো ইনভেস্টরদের দেখায় যে আপনার ব্যবসা সিস্টেমেটিক এবং আইন মেনে চলছে।
৬. বিনিয়োগের শর্তাবলী বুঝে নিন
অনেক উদ্যোক্তা ইনভেস্টমেন্ট চুক্তির জটিল ভাষা না বুঝেই সই করে ফেলেন, যা ভবিষ্যতে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
ফান্ডিং চুক্তিতে (Investment Agreement) সাধারণত উল্লেখ থাকে:
ইনভেস্টরের রাইটস (যেমন ভোটিং বা ডিসিশন পাওয়ার)
এক্সিট পলিসি
প্রফিট শেয়ারিং
ভবিষ্যতের ফান্ড রাউন্ডে অংশগ্রহণের শর্ত
সবকিছু ভালোভাবে বোঝার জন্য অভিজ্ঞ কর্পোরেট আইনজীবীর পরামর্শ নিন।
৭. ডিউ ডিলিজেন্সের প্রস্তুতি নিন
ফান্ডিংয়ের আগে ইনভেস্টররা আপনার কোম্পানির ডকুমেন্ট, চুক্তি, ট্যাক্স রেকর্ড ইত্যাদি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করবেন। এটিই ডিউ ডিলিজেন্স।
এর জন্য প্রয়োজন:
আপডেটেড ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্ট
রেগুলেটরি কমপ্লায়েন্স সার্টিফিকেট
শেয়ার রেকর্ড ও বোর্ড রেজল্যুশন
যদি এই ডকুমেন্টগুলো এলোমেলো থাকে, ইনভেস্টর সহজেই আগ্রহ হারাতে পারেন।
৮. ডেটা প্রাইভেসি ও ক্লায়েন্ট চুক্তি
আজকের ডিজিটাল ব্যবসায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ডেটা সিকিউরিটি। গ্রাহক বা ক্লায়েন্টের তথ্য কীভাবে ব্যবহার, সংরক্ষণ ও শেয়ার করা হবে - এ বিষয়ে পরিষ্কার নীতি থাকা জরুরি। এছাড়া, ক্লায়েন্ট ও ভেন্ডরের সঙ্গে করা প্রতিটি চুক্তিতে Terms & Conditions এবং Confidentiality Clause থাকা উচিত।
৯. ভবিষ্যতের এক্সিট স্ট্রাটেজি ভাবুন
ফান্ডিং মানে শুধু টাকা নয়, ভবিষ্যতে কীভাবে ইনভেস্টর বের হবেন সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। সেই জন্য শুরু থেকেই একটি Exit Strategy নির্ধারণ করুন। যেমন IPO, acquisition, বা buy-back। এটি দেখায় যে আপনি ব্যবসাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে চালাচ্ছেন।
১০. একজন পেশাদার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন
সবশেষে, আপনি যতই জানুন না কেন, একজন অভিজ্ঞ Corporate Lawyer আপনার সবচেয়ে বড় সহযোগী হতে পারেন। তারা শুধু চুক্তি তৈরি করেন না, বরং আপনাকে গাইড করেন কিভাবে ব্যবসাকে আইনি জটিলতা থেকে দূরে রেখে ফান্ডিং প্রক্রিয়াকে মসৃণ করা যায়।
ফান্ডিং শুধু একটি অর্থনৈতিক চুক্তি নয়, এটি আপনার ব্যবসার বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতিফলন। যদি আপনি শুরু থেকেই সঠিক আইনি কাঠামো গড়ে তোলেন, তবে ইনভেস্টররাও আপনাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পাশে পাবেন। আইন জানা মানে শুধু ঝুঁকি কমানো নয়, বরং আপনার ব্যবসাকে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি ও সাফল্যের পথে এগিয়ে নেওয়া।
আপনার স্টার্টআপের আইনি কাঠামো, ফান্ডিং ডকুমেন্টেশন বা শেয়ার চুক্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তা প্রয়োজন?
যোগাযোগ করুন Advocate Masuma Akter Mithila-র সঙ্গে। আপনার ব্যবসাকে দিন আইনি নিরাপত্তার শক্ত ভিত্তি।